Ads Area

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ | ভারতের বনভূমি

স্বাভাবিক উদ্ভিদ যে কোন দেশের পক্ষে একটি বিশেষ সম্পদ এবং স্বাভাবিক উদ্ভিদের অভাবে দেশ মরু অঞ্চলে পরিণত হয়।ভূ-প্রকৃতি ,জলবায়ু ও মৃত্তিকা স্বাভাবিক উদ্ভিদকে নিয়ন্ত্রণ করে।ভারতের ভূ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ,জলবায়ুর বিশেষত বৃষ্টিপাতের বিভিন্নতা এবং মৃত্তিকার পার্থক্য এখানে বনভূমি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। ভারতের মোট ভূ-ভাগের প্র্রায় 19.27 শতাংশ বনভূমি। তবে এই বনভূমি সর্বত্রই গভীর নয় ,দূরে দূরে ছড়ান ছোট ছোট গাছের বনভূমিও দেখা যায়।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর জলবায়ুর প্রভাব

Climate effects on natural plants in India:কোন স্থানের জলবায়ু অর্থাৎ বার্ষিক বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার ঋতুগত তারতম্য ঐ স্থানের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে প্রভাবিত করে।কোন স্থানের জলবায়ুর ওপর সেখানকার উদ্ভিদের প্রকৃতি নির্ভরশীল।

  • ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত 200 সেন্টিমিটারের বেশি এবং তাপমাত্রা যথেষ্ট তীব্র,সেইসব অঞ্চলে নিরক্ষীয় অঞ্চলের মত চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। এইসব অঞ্চলের গাছপালাগুলো বছরের কোন সময়েই পত্রহীন হয় না।এইসব অঞ্চলে শিশু,গর্জন,রোজউড মেহগনি,চাপলাস ইত্যাদি।
  • ভারতের যেসব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত 100-200 সেন্টিমিটারের বেশী এবং তাপমাত্রা যথেষ্ট তীব্র,সেইসব অঞ্চলে নিরক্ষীয় অঞ্চলের মত চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। এইসব অঞ্চলে শিশু ,গর্জন ,রোজউড,মেহগনি ইত্যাদি হল প্রধান বৃক্ষ।
  • ভারতের যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত 50-100 সেন্টিমিটার,সেখানে সাবাই ,কাশ প্রভৃতি তৃণ বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায়। আরাবল্লীর পূর্ব দিকে অবস্থিত রাজস্থানের মরুপ্রান্ত ,গুজরাটের কচ্ছ ও কাথিয়াওয়ার অঞ্চল এবং দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক ও পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রের কোন কোন অঞ্চলে এই ধরণের স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়।

ভারতের বনভূমির শ্রেণী বিভাগ এবং ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চল

Classification of forest in India and natural vegetation in India:ভারতের বনভূমির শ্রেণী বিভাগ এবং ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চল নিচে দেওয়া হয়েছে।

Classification of Forest

শ্রেণী বিভাগ অরণ্যের পরিমান % মোট আয়তন % উদ্ভিদের নাম
ক্রান্তীয় আদ্র চিরহরিৎ 2.92 8.0 ধুপ,দেওদার,বাঁশ
ক্রান্তীয় উপ চিরহরিৎ 13.79 4.1 শাল,সেগুন,বাদাম,মহুয়া,শিমূল,আমলকি
ক্রান্তীয় আদ্র পর্ণমোচী 19.73 37.0(সর্বাধিক ) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ
উপকূলীয় ও জলাভূমি 0.69 0.6 নিম,গামার ,জাম
ক্রান্তীয় শুস্ক চিরহরিৎ 0.13 0.2 সেগুন,শাল,খয়ের
ক্রান্তীয় শুস্ক পর্ণমোচী 41.87(সর্বাধিক ) 28.6 খেজুর,পলাশ,বাবলা
ক্রান্তীয় কাঁটাঝোপ 2.25 2.6 ওক,বাদাম,পাইন
উপক্রান্তীয় বৃহৎপত্র 2.69 0.4 চির /ছিল
উপক্রান্তীয় পাইন 2.63 6.6 অলিভ,আকাসিয়া
উপক্রান্তীয় শুস্ক চিরহরিৎ 0.03 2.5 বার্চ,দেওদার,ওক হেমলক
পার্বত্য আদ্র নাতিশীতোষ্ণ 0.69 3.6 বার্চ,দেওদার,ওক হেমলক
হিমালয়ের আদ্র নাতিশীতোষ্ণ 4.12 3.4 পাইন,ফার,স্প্রুস ,সিডার
হিমালয়ের শুস্ক নাতিশীতোষ্ণ 0.84 0.3 স্যাপোল,ওক
আল্পীয় 2.55 2.1 ফার,রডোডেনড্রন
মোট 100.00 100.00
  • ভারতের মোট অরণ্যের পরিমান 692027 বর্গ কিলোমিটার (21.23%)
  • 21.23% এর মধ্যে খোলা অরণ্য হল 8.99%,মাঝারি ঘন অরণ্য হল -৯.৭০ এবং খুব ঘন অরণ্য হল-2.54%
  • উত্তর -পূর্ব ভারতে দেশের অরণ্য আচ্ছাদনের এক চতুর্থাংশ থাকলেও ঝুম চাষের জন্য 549 বর্গ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

Q.ভারতের 5 ধরনের প্রাকৃতিক গাছপালা কি কি?

  • গ্রীষ্মমন্ডলীয় চিরসবুজ রেইন ফরেস্ট।
  • পর্ণমোচী বা মৌসুমি বনের প্রকার।
  • শুষ্ক পর্ণমোচী বন।
  • পাহাড়ী বন।
  • জোয়ার বা ম্যানগ্রোভ বন।
  • আধা-মরুভূমি এবং মরুভূমির গাছপালা।

Q.স্বাভাবিক উদ্ভিদ কি?

Ans.স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলতে এমন একটি উদ্ভিদ সম্প্রদায়কে বোঝায়, যেটি মানুষের সাহায্য ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠেছে এবং দীর্ঘদিন ধরে মানুষের দ্বারা নিরবচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। একে কুমারী উদ্ভিদ বলা হয়। এইভাবে, চাষকৃত ফসল এবং ফল এবং বাগানগুলি উদ্ভিদের অংশ কিন্তু প্রাকৃতিক গাছপালা নয়।

Q.ভারতের প্রধান গাছপালা কোনটি?

Ans.ভারতে 5টি প্রধান ধরণের স্বাভাবিক উদ্ভিদ রয়েছে, যেগুলিহল – ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বন। ক্রান্তীয় পর্ণমোচী বন। ক্রান্তীয় কাঁটা বন এবং স্ক্রাব।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ



০১. চিরহরিৎ অরণ্যঃ
যে সমস্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ সেন্টিমিটারের বেশি এবং তাপমাত্রা যথেষ্ট তীব্র, সেইসব অঞ্চলে চিরহরিৎ বা চিরসবুজ অরণ্য দেখা যায়।  এই সমস্ত অঞ্চলের গাছগুলির পাতা বছরের কোন সময়েই পত্রহীন হয়না এবং সারাবছর ঘন সবুজ পাতায় ঢাকা থাকে, তাই এই অরণ্যের নাম হয়েছে চিরহরিৎ বা চিরসবুজ অরণ্য। 

■ অঞ্চলঃ 
পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল। 

■ প্রধান উদ্ভিদঃ 
রোজউড, মেহগিনি, গর্জন, নিম, পলাশ, সেগুন, শিশু, রবার, বাঁশ, চাপলাস প্রভৃতি। 

■ বৈশিষ্ট্যঃ 
বনভূমি খুবই ঘন হয়, 
গাছগুলির উচ্চতা ৪০-৬০ মিটার কিংবা তারও বেশি হয়ে থাকে, 
সারাবছর সবুজ পাতায় আবৃত থাকে, 
গাছগুলির পাতাগুলি বৃহৎ ও লম্বা হয়। 

■ ব্যবহারঃ
রেলওয়ে স্লিপার, বাড়ির আসবাবপত্র, সেতু নির্মাণ, গৃহ নির্মাণ প্রভৃতি কাজে এই কাঠ ব্যবহার করা হয়। 



০২. আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্যঃ
যে সমস্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০০ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার এবং গড় উষ্ণতা ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, সেইসব অঞ্চলে আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য দেখতে পাওয়া যায়।

■ অঞ্চলঃ 
পশ্চিমবঙ্গ সমভূমি ও মালভূমি এলাকা, ওড়িশার মালভূমি ও উপকূলভাগ, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পূর্বঢাল, তামিলনাড়ুর উপকূল।

■ প্রধান উদ্ভিদঃ 
শাল, সেগুন, শিরীষ, পলাশ, আবলুশ, অর্জুন, চন্দন, মহুয়া, আম, জাম প্রভৃতি। 

■ বৈশিষ্ট্যঃ 
বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই বনভূমির গাছের পাতা ঝরে যায় বলে, এই প্রকারের বনভূমিকে পর্ণমোচী বনভূমি বলা হয়। 
চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী উভয় প্রকার গাছই এখানে জন্মায় বলে, এই অরণ্যকে মৌসুমি মিশ্র অরণ্য বলা হয়ে থাকে।
গাছের উচ্চতা ২৫ থেকে ৬০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

■ ব্যবহারঃ
আসবাবপত্র, রেলওয়ে স্লিপার, নৌকা তৈরি প্রভৃতি কাজে এই কাঠ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 



০৩. শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্যঃ 
যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার এবং গড় উষ্ণতা ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, সেখানে শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য দেখতে পাওয়া যায়।

■ অঞ্চলঃ
দাক্ষিণাত্যের মধ্যভাগ, রাজস্থানের দক্ষিণ-পূর্বাংশ, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ।

■ প্রধান উদ্ভিদঃ 
হাতি ঘাস, সাবাই ঘাস, শরচাপড়া ঘাস, কুল, বেল, শাল প্রভৃতি।
 
■ বৈশিষ্ট্যঃ 
শীতকালে এই উদ্ভিদগুলির পাতা ঝরে যায়,
এই ধরনের গাছগুলির উচ্চতা ১০-১৫ মিটার হয়ে থাকে,
ভারতে শুষ্ক পর্ণমোচী বনশ্রেনি সর্বাধিক আয়তন অধিকার করে আছে,
এখানে পর্ণমোচী বৃক্ষযুক্ত দীর্ঘ ঘাসের তৃণভূমি দেখা যায়, তাই এই অঞ্চল সাভানা নামে পরিচিত। 

■ ব্যবহারঃ
ধূপ, ধুনো, আসবাবপত্র প্রভৃতি কাজে। 



০৪. ক্রান্তীয় মরু ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদঃ
গড় বৃষ্টিপাত ৫০ সেন্টিমিটারেরও কম, তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিগ্রেড এবং স্বল্প আর্দ্রতা যুক্ত অঞ্চলে এই বনভূমি দেখতে পাওয়া যায়।

■ অঞ্চলঃ
ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশ, পাঞ্জাবের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ, রাজস্থানের থর মরুভূমি, পশ্চিম হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ।

■ প্রধান উদ্ভিদঃ 
বাবলা, খেজুর, ক্যাকটাস, তাল প্রভৃতি। 

■ বৈশিষ্ট্যঃ 
এই সমস্ত উদ্ভিদে বাষ্পীভবন রোধ করার জন্য পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়, 
এই সমস্ত উদ্ভিদের পাতা খুবই ছোট অথবা পত্রহীন,
এই অঞ্চলে পশুপালন করা হয়,
এই সমস্ত গাছের শিকড় মাটির গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। 

■ ব্যবহারঃ
এই গাছের কাঠ সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় জ্বালানী হিসাবে।



০৫. পার্বত্য অরণ্যঃ
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৭৫ থেকে ১২৫ সেন্টিমিটার ও তাপমাত্রা ১০ থেকে ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড যুক্ত অঞ্চল এই অরণ্য দেখতে পাওয়া যায়।

■ অঞ্চলঃ
দক্ষিণ ভারত ও হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল। 

■ প্রধান উদ্ভিদঃ 
দেবদারু, ওক, অলিভ, ফার, স্কুস, জুনিয়ার, পাইন, ম্যাপল প্রভৃতি।



০৬. ম্যানগ্রোভ অরণ্যঃ
সমুদ্র উপকূলে, বিশেষ করে নদীর বদ্বীপে যেসব স্থান জোয়ারের সময় সমুদ্রের জলে প্লাবিত হয়, সেই স্থানে শ্বাসমূলযুক্ত বৃক্ষ জন্মাতে দেখা যায়।  এই প্রকার শ্বাসমূলযুক্ত বৃক্ষকে ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ বলে।

■ অঞ্চলঃ
মহানদী, গোদাবরী ও কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ, পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন, গুজরাট, আন্দমান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।

■ প্রধান উদ্ভিদঃ 
সুন্দরী, পাইন, গরান, গেঁওয়া প্রভৃতি। 

■ বৈশিষ্ট্যঃ 
এই উদ্ভিদগুলি সারাবছর চিরসবুজ থাকে এবং এই উদ্ভিদের শ্বাসমূল, ঠেসমূল ও অধিমূল দেখা যায়।

■ ব্যবহারঃ
গরুর গাড়ির চাকা, লাঙল, আসবাবপত্র, জ্বালানী প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা হয়। 



০৭. সরলবর্গীয় অরণ্যঃ 
উত্তর গোলার্ধে ৫০ থেকে ৭০ ডিগ্রি অক্ষরেখার মধ্যে যে বিশেষ ধরনের বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে, তাকে সরলবর্গীয় বনভূমি বলা হয়।

■ অঞ্চলঃ
পূর্ব হিমালয়ে ২৫০০ থেকে ৪০০০ মিটার উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের ২০০০ থেকে ৩২০০ মিটার উচ্চতায়। 

■ প্রধান উদ্ভিদঃ 
পাইন, ফার, দেবদারু প্রভৃতি।

■ বৈশিষ্ট্যঃ 
এই বনভূমির কাঠ খুব নরম ও হালকা হয়,
এখানকার গাছগুলির আকৃতি মোচার মতো, 
এই অরণ্যের গাছগুলি একেবারে সোজা ও সরলভাবে দাঁড়িয়ে থাকে বলে এদের সরলবর্গীয় উদ্ভিদ বা সরলবর্গীয় বৃক্ষ বলে। 

■ ব্যবহারঃ
প্যাকিং বাক্স, দেশলাই কাঠি, কাগজ প্রভৃতি প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়।



Post a Comment

0 Comments