শেয়ার মার্কেটে ট্রেডিং কি, কতপ্রকার ট্রেডিং (Trading) হয় এবং ট্রেডিং সুবিধা ও অসুবিধা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, নিচের এই নিবন্ধ টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
বর্তমান সময়ে, তরুণ প্রজন্ম এর কাছে ট্রেডিং ( Trading) শব্দ টি খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। প্রত্যেকেই শেয়ার মার্কেট ( Share Market) থেকে ট্রেডিং করে ইনকাম করতে চাইছে। চারিদিক এ ট্রেডিং এর কোর্স ( Trading Online Course) বিক্রি হচ্ছে। তাই , আজ আপনাদের কাছে ট্রেডিং কি, এবং কতপ্রকার ট্রেডিং শেয়ার মার্কেট এ করা যায়, সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরবো।
শেয়ার মার্কেটে ট্রেডিং কি ?
[ What Is Trading in Bengali ]
শেয়ার মার্কেটে অল্প সময়ের জন্য কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনা - বেচা ( Buy - Sell) কে ট্রেডিং বলা হয়। আপনি আজই কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনে আজকেই বিক্রি অথবা, ২ দিন পর বা ১ মাস পর বিক্রি করতে পারেন, এটিকেই সহজ ভাষায় ট্রেডিং হবে। ট্রেডিং মূলত টেকনিক্যাল এনালাইসিস ( Technical Analysis) নির্ভর। শেয়ার মার্কেটে ট্রেডিংয়ের জন্য কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস এর উপরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
শেয়ার মার্কেটে ২ ভাবে ইনকাম করা যায় -
1. ইনভেস্টিং (Investing)
2. ট্রেডিং ( Trading)
ট্রেডিং কত প্রকার ? ( Types Of Trading)
শেয়ার মার্কেটে ট্রেডিং মূলত, ৩ প্রকার হয়ে থাকে -
1. সুইং ট্রেডিং ( Swing Trading)
2. ইন্ট্রাডে ট্রেডিং ( Intraday Trading)
3. অপশন/ ফিউচার ট্রেডিং ( Option/ Future Trading)
এবার আমরা এই তিন প্রকার ট্রেনিং সম্পর্কে জেনে নেব -
(1) সুইং ট্রেডিং( Swing Trading) : যখন কোন কোম্পানির শেয়ার কেনার পর ২ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যে প্রফিট অথবা লস এ বিক্রি করে দেওয়া হয় তখন সেই ট্রেডিং কে সুইং ট্রেডিং বলে। সুইং ট্রেড এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে কোম্পানির ছোট ছোট উপর - নিচ ( Up & Down) হতে থাকে মোমেন্টকে ধরার মাধ্যমে ইনকাম করা হয়। সুইং ট্রেড নেওয়ার আগে উপরে দিকে একটি নির্দিষ্ট টার্গেট প্রাইস ( Target Price) সেট করা হয় এবং নিচের দিকে একটি স্টপ লস ( Stop Loss) সেট করা হয়ে থাকে। শেয়ার প্রাইজ যদি উপরের টার্গেটে দিকে যায় তাহলে প্রফিট বুকিং করা হয় এবং যদি ডাউনে এসে স্টপ লস হিট করে তাহলে লস বুকিং করা হয়।
Picture: Swing Trading
(2) ইন্ট্রাডে ট্রেডিং ( Intraday Trading) : যদি আপনি আজকেই শেয়ার কিনে আজকেই বিক্রি করে দেন, তবে সেই ট্রেডিং কে বলা হয় ইন্ট্রাডে ট্রেডিং। ইন্ট্রাডে ট্রেডিং আপনি নিজের ক্যাপিটাল দিয়েও করতে পারেন আবার আপনার ডিমাট অ্যাকাউন্ট অর্থাৎ ব্রোকার একাউন্টের মাধ্যমে ঋণ করতে পারেন। একটু বুঝিয়ে বলি ব্যাপার টা, ধরুন আপনার কাছে 10000 টাকা আছে। কিন্তু আপনি যদি ইন্ট্রাডে ট্রেডিং করেন, তাহলে আপনার ব্রোকার অ্যাকাউন্ট আপনাকে ৫গুণ টাকার শেয়ার কেনার সুবিধা দেবে অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা শেয়ার আপনি কিনতে পারবেন। এখানে মনে রাখবেন আপনার যদি প্রফিট হয় তাহলে ওই ৫০ হাজার টাকার উপরে প্রফিট হবে এবং যদি লস হয় তাহলেও কিন্তু এই ৫০ হাজার টাকার উপরে লস হবে। আর ইন্ট্রাডে ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে , আপনি যেদিন শেয়ার কিনবেন, সেই দিনই বিকেল ৩.১৫ মিনিটের আগে শেয়ার বিক্রি করতে হবে।
এছাড়া আরও একটি বিষয় মনে রাখবেন -
ধরুন আপনি অ্যানালিসিস করে মনে করছেন যে এই শেয়ারটির দাম বাড়বে, তাহলে আগে শেয়ারটিকে কিনলেন এবং তারপর দাম যখন বাড়ল সেটিকে বিক্রি করে তার লাভ পেলেন। আবার আপনি উল্টোটাও করতে পারেন। যদি আপনার মনে হয় যে এই শেয়ারটির দাম এখন ডাউনে যাবে, তাহলে আগেই আপনি সেই শেয়ারটিকে Sell করে দিতে পারবেন বেশি মূল্যে এবং যখন ডাউনে আসবে তখন আপনি কম দামে শেয়ারটিকে Buy করে লাভ পেতে পারেন।
(3) অপশন / ফিউচার ট্রেডিং ( Option / Future Trading) : ধরুন আপনি এনালাইসিস করে প্রেডিকশন করলেন যে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কোনো কোম্পানির শেয়ার বা অথবা ইনডেক্স ( Index) উপরে যাবে। কিন্তু আপনার কাছে সেই শেয়ার বা ইনডেক্স কেনার পুরো টাকা নেই। তখন আপনি অল্প কিছু টাকা দিয়ে সেই শেয়ারের অপশন বা ইনডেক্সের অপশন কিনতে পারেন। এবং আপনার প্রেডিকশন হিসেবে সেই শেয়ার বা ইনডেক্স উপরে যায় তাহলে আপনি লাভবান হতে পারবেন। উল্টোভাবে আপনার যদি মনে হয় যে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেও এই শেয়ার বা ইনডেক্স ডাউনে যাবে। তাহলে আপনি আগেই অপশন সেল করতে পারেন, এবং পরে সেটি কেনার মাধ্যমে লাভবান হতে পারে। তবে মনে রাখবেন যদি আপনার প্রেডিকশন মত কোন কিছু না হয় তাহলে কিন্তু আপনাকে লস বুক করতে হবে।
Note : অপশন ট্রেডিং (Option Trading)শেয়ার বাজারের মধ্যে সবথেকে রিস্কি এবং এডভান্স লেভেলের। অপশন ট্রেডিং এ কয়েক ঘন্টার মধ্যে আপনার ক্যাপিটাল যেমন ৫-১০ গুণ হয়ে যেতে পারে আবার উল্টোদিকে আপনার সমস্ত টাকা লস হয়ে যেতে পারে। তাই অপশন ট্রেডিং থেকে দূরে থাকাই ভালো।
উপরে যে তিন ধরনের ট্রেডিং ( Trading) সম্পর্কে আলোচনা করা হলো এর মধ্যে কে সবথেকে কম রিস্ক হলো সুইং ট্রেডিং।
শেয়ার বাজারে ট্রেডিং এর সুবিধা ও অসুবিধা ( Pros & Cons Of Trading In Bengali )
বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শেয়ার মার্কেটে এসে ট্রেডিং করার প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই ট্রেডিং করা একদম এ উচিত নয়। এই ট্রেডিং এর কিছু সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো -
ট্রেডিং এর সুবিধা:
(1) শেয়ার বাজারে ট্রেডিং করতে গেলে অল্প ক্যাপিটাল দিয়েই শুরু করা যায়।(2) ট্রেডিং এর মাধ্যমে রেগুলার ইনকাম হয়।
(3) মার্কেট ডাউন চলে গেলেও ট্রেডাররা ইনকাম করতে পারে Short Sell এর মাধ্যমে । (শর্ট selling শুধুমাত্র ইন্ট্রাডে ও অপশন ট্রেডে করা যায়)
(4) ট্রেডিং যেহেতু টেকনিক্যাল এনালাইসিস ( Technical Analysis) নির্ভর তাই কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল সম্পর্কে কোন ধারণা না রাখলেও চলে
ট্রেডিং এর অসুবিধা:
(1) ট্রেডিং খুবই রিস্কি ( High Risk) হয়ে থাকে।(2) শেয়ার মার্কেটে ট্রেডিং সম্পূর্ণভাবেই প্রেডিকশন নির্ভর। মার্কেট কখন কি মুভমেন্ট করবে এটি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ভাবে কেউ বলতে পারে না।
(3) ট্রেডিং অনেকটা নেশার মত হয়ে যায়, তাই অনেকে ওভার ট্রেডিং করে বসে এবং তার সম্পূর্ণ ক্যাপিটাল হারিয়ে ফেলে।
(4) অপশন ট্রেডে যেমন অল্প সময়ে অনেক গুণ রিটার্ন পাওয়া যায় তেমনি আবার উল্টোদিকে আপনার সমস্ত ক্যাপিটাল ও চলে যেতে পারে।
(5) সারাদিন যেহেতু ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রাখতে হয় তাই আপনার শারীরিক প্রবলেম হতে পারে। ( Swing ট্রেড বাদে)।
(6) আপনার আশেপাশে যাদের কাছেই শুনে থাকবেন যে 'শেয়ার মার্কেট থেকে কোন কিছু হয় না, টাকা পয়সা সব হারাবি' মনে রাখবেন এরা সবাই ট্রেডার।
আশা করি আপনি শেয়ার মার্কেটে ট্রেডিং সম্পর্কে খুবই সহজ ভাষায় বুঝতে পারলেন। পোস্ট টি ভালো লাগলে, অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে যারা শেয়ার মার্কেট নিয়ে আগ্রহী, তাদের কাছে শেয়ার করবেন।